Skip to main content

ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি দূর করার উপায়

পছন্দের ড্রেস, পারফেক্ট মেকআপ, সিল্কি চুল ভাবতেই কতো ভালো লাগে, তাই না? এতো সুন্দর গেটআপে পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য মাথাতে একটু খুশকিই যথেষ্ট! মাথায় খুশকি নিয়ে চুল খোলা রাখতেও ভয় পায় অনেকে। ড্রেসের উপর তুষারের মতো খুশকি পরে থাকতে দেখা মোটেও সুখকর নয়। আজকের আলোচনায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারতি আলোচনা করা হয়েছে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি দূর করার উপায়

বাকি সব দিক ঠিক রাখতে গিয়ে চুলের যত্ন নেওয়ার কথা ভুলে যান অনেকে। আবার, শরীরের এই অংশটিকে অতোটা গুরুত্বের সাথে না নেয়ার মত মানুষেরও অভাব নেই। এমন বেখেয়ালি মনোভাবের জন্য বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ খুশকির সমস্যায় ভুগছেন।

খুশকির সমস্যা থেকে মুখে ব্রণ ওঠার সমস্যাও হয়ে থাকে। তাই এর প্রতিকারের পদক্ষেপ নেওয়া অনেক বেশি জরুরী। তার আগে জানা দরকার-

খুশকি কেন হয়?

মাথার ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক বা অনেক বেশি তৈলাক্ত হয়ে গেলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি মূলত এক ধরনের ছত্রাকের কারনে হয়ে থাকে। চুল অপরিষ্কার থাকলে, নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে, নিয়মিত তেল না দিলে ছত্রাক মাথার চামড়া তুলতে থাকে। মৃত কোষ তৈরি করে। মূলত সেটাকেই আমরা খুশকি বলে থাকি।

ত্বকের সমস্যায় তো আমরা অনেক যত্নশীল হয়ে যাই। চুলের সমস্যায় কতো জন মাথা ঘামাই? নারী হোক বা পুরুষ; আসল সৌন্দর্য হচ্ছে তার চুলে। মুখ যেমন, নিয়ম করে ফেসওয়াস দিয়ে ধোয়া হয়। ময়শ্চারাইজার, টোনার, সানস্ক্রিন, ডে ক্রিম, নাইট ক্রিম ইত্যাদি লাগানো হয়। ঠিক তেমনি চুল সুন্দর রাখতে ও খুশকি থেকে বাঁচতে- চুল নিয়মিত আচড়াতে হয়। চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করতে হয়। তেল দিতে হয়। সপ্তাহে ২-৩ বার হেয়ার প্যাক ইত্যাদি লাগাতে হয়।

খুশকি থেকে বাঁচতে টাকা খরচ করে বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন অনেকেই। ফলাফল বেশির ভাগ সময়ই ভালো হয় না। ক্যামিক্যাল চুলকে রুক্ষ, নরম, নির্জীব করে দেয়। অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে অনেক সময় চুল পরার সমস্যাও দেখা দেয়। যাকে বলে এক সমস্যা দূর করতে গিয়ে আরেক সমস্যার উদয়।

এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে না চাইলে, প্রাকৃতিক উপায় চুলের যত্ন নিন। এর জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চুলও ভালো থাকবে, টাকাও খরচ করতে হবে না। তেমনি কিছু সেরা হেয়ার প্যাক থাকছে আজকের আলোচনায়।

লেবু

লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি, ত্বক ও চুলের জন্য দারুন উপকারী।

ব্যবহারের নিয়ম –

লেবুর রস বের করে নিয়ে এতে এক চামচ অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি আলতো করে ঘষে মাথায় লাগান। আধঘন্টা অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

এছাড়াও শ্যাম্পুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

নারিকেল তেল হালকা গরম করে এতে লেবুর রস খুব ভালোভাবে মিশিয়ে সহণীয় তাপমাত্রায় এলে মাথায় আলতো ঘষে চুলের গোরায় লাগাতে হবে। ২০-৩০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। ত্বক শুষ্ক থাকার কারনে যদি খুশকি দেখা দেয় সেক্ষেত্রে এই প্যাকটি ব্যবহারে সে সমস্যাটি আর থাকবে না। এই প্যাকটি চুলকে খুশকি মুক্ত করার পাশাপাশি চুলকে করবে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যজ্জ্বোল।

মেথি

চুলের সমস্যার কথা বলা হবে আর মেথির কথা আসবে না এমনটা হতেই পারে না। আদিকাল থেকেই চুল পরা রোধে ও চুল সুন্দর রাখতে মেথি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ব্যবহার পদ্ধতি-

১। চুলের খুশকি দূর করতে ১০/১২ ঘন্টা মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজানো মেথি বেঁটে নিবেন। অতঃপর মেথি ভেজানো পানি চুলে তেল দেওয়ার মতো করে লাগিয়ে নিবেন। তার ৫ মিনিট পর মেথি বাঁটা সমস্ত চুলে লাগিয়ে আধঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। খুব বেশী খুশকির সমস্যা থাকলে মেথির মিশ্রণ সপ্তাহে ২ ব্যবহার করতে হবে। আর তুলনামূলক কম খুশকি হলে সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করলেই হবে।

২। মেথির আরেকটি জনপ্রিয় প্যাকের কথা না বললেই নয়। প্যাকটির জন্য লাগবে- মেথি (৩/৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা মেথি), নিম পাতা, টকদই ও লেবুর রস।

মেথি ও নিম পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। পেস্টের সাথে লেবুর রস ও টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। খুশকি দূর করতে এই প্যাকটি অনেক দ্রুত কাজ করে। প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। ৩-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করলেই আশানুরূপ ফল পাবেন।

নিম

১। নিমে আছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপদান যা মাথার খুশকি দূর করার পাশাপাশি মাথাকে রাখে ঠান্ডা। নিমপাতা বেঁটে এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্যাকটি ভালোভাবে ঘষে মাথায় লাগান। আধঘন্টা রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলকে করবে কোমল। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।

২। নিমপাতা, মেথি, কয়েক টুকরা লেবু একসাথে সিদ্ধ করে, সিদ্ধ করা পানি দিয়ে মাথা ধুলে খুব দ্রুত খুশকি চলে যায়। এই দ্রবণটির সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে কম করে হলেও সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে হবে।

নারিকেল তেল গরম করে তাতে নিমপাতা বাঁটা মেশাতে হবে। সহনীয় তাপমাত্রায় এলে মিশ্রণটি আলতো ঘষে চুলে লাগাতে হবে। ৪-৫ ঘন্টা রাখতে হবে, সবচেয়ে ভালো হয় যদি সারারাত রেখে পরদিন শ্যাম্পু করে ফেলা যায়। খুবই উপকারী এই প্যাকটি চুলকে খুশকি মুক্ত করার পাশাপাশি, চুলকে করবে শক্ত ও মজবুত। চুলের খুশকি দূর করা, চুলকে শক্ত করা ও স্বাস্থ্যজ্জ্বোল চুল পেতে প্যাকটি অসাধারণ কাজ করে।

ডিম

১। ডিমের কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এতে যোগ করুন ২ চামচ লেবুর রস। ১ চামচ নারিকেল তেল, ২ চামচ অলিভ অয়েল। উপাদনগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় লাগান। ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ বার ব্যবহারেই খুশকি দূর হবে। সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে ৩-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করুন।

২। ডিমের সাদা অংশ, ১ আধ কাপ টকদই, ২ চামচ মধু, ২ চামচ লেবুর রস একত্রে ব্লেন্ড করে নিন। মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে আধঘন্টা অপেক্ষা করুন। আধঘন্টা পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলকে করবে সিল্কি ও ঝলমলে। খুশকি দূর করার জন্য প্যাকটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহারই যথেষ্ট। তবে চুল রেশমি, ঝলমলে ও সুন্দর রাখতে চাইলে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

পেয়াজের রস

৪-৫ টা মাঝারি সাইজের পেয়াজ ব্লেন্ড করে, পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে এর রস বের করে নিতে হবে। এরপর পেয়াজের রসের সাথে যোগ করুন ১ চামচ লবন। মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেয়াজের গন্ধটা সহনীয় না হলে, পরদিন শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।

রসুন

নানাবিধ ওষুধি গুন সমৃদ্ধ রসুনের কথা না বললেই নয়। রসুনে ফাঙ্গাস রোধক উপাদান অতি উচ্চমাত্রায় বিদ্যমান। যা চুলকে খুশকি মুক্ত করতে শতভাগ সহায়ক।
খুশকি নিয়ন্ত্রণে রসুনের ব্যবহার

১। রসুনের প্যাক বানানোর জন্য ৫-৬ কোয়া রসুন ব্লেন্ড করে নিন। রসুনের ব্লেন্ডে যোগ করুন ২ চামচ মধু। উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি ৩০ মিনিটের জন্য রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। রসুনের গন্ধ থেকে বাঁচতে শ্যাম্পু করে নিন। খুশকি থেকে রেহাই পেতে সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন।

কলা

ত্বকের যত্নে কলার কার্যকারিতা অপরিসীম। হোক সেটা মুখের ত্বক বা মাথার। অনেকেই আমরা চুল সিল্কি করতে কলা ব্যবহার করি। খুসকি দূর করতেও কিন্তু কলার ভূমিকা কোনো অংশে কম না। কলার প্যাক বানানোর জন্য ১ টি কলা, ৩ টি আমলকি একত্রে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। মিশ্রণটিতে ২ চামচ মধু ও ২ চামচ লেবুর রস যোগ করুন।

প্যাকটি মাথায় লাগিয়ে আধঘন্টা অপেক্ষা করুন। আধঘন্টা পর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, আর অধিকারী হোন খুশকি মুক্ত রেশমি সুন্দর চুলের। প্যাকটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।

Comments

Popular posts from this blog

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

সবার প্রথম আমাদের চোখ যায় মুখের দিকে, তাই মুখ যদি সুন্দর হয় তবেই আপনি সুন্দর বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করতে ব্রণ কমবেশি সবার জীবনেই হানা দেয়। এবং, মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে আমাদের অসুন্দর বানিয়ে ফেলে। সাধারণত নিয়মিত পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, কম পানি পান করা, ভাঁজাপোড়া বা তেলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, রাতজাগা, দুশ্চিন্তা করা, মেকআপ ভালোভাবে না তোলা, রোদে পোঁড়া ইত্যাদি কাজগুলোর কারনে ব্রণ হয়ে থাকে। আমাদের আজকের আলোচনায় সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার ৫টি নিশ্চিত উপায়

আপনার মনে কি কখনো হয়েছে যে, আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ দিয়েই আপনি অনলাইনে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন? হ্যাঁ, এটা সম্ভব! একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়ে লিখতে পারেন, পণ্য বিক্রি করতে পারেন, এমনকি অন্যের জন্য কাজ করে টাকা আয় করতে পারেন। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করতে পারেন।